বাংলাদেশ ০৮:৩৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ০৬ অগাস্ট ২০২৫, ২২ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::

চট্টগ্রামে ক্যাম্পাস নিয়ন্ত্রণের চেষ্টায় ছাত্রদল ও শিবির

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১২:২৯:৩১ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৬ জুলাই ২০২৫ ১৪৪ বার পড়া হয়েছে

বছরখানেক আগেও চট্টগ্রামের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা নিজেদের মধ্যে সংঘাতে জড়াতেন। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর রাতারাতি বদলে যায় হাওয়া। নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ এখন উধাও। এ পরিস্থিতিতে বন্দরনগরীর বিভিন্ন ক্যাম্পাস দখলে নিতে মুখোমুখি ছাত্রদল ও ছাত্রশিবির।চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম কলেজ, হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ, চট্টগ্রাম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিটি কলেজ, কমার্স কলেজ, ইসলামিয়া কলেজসহ আরও কয়েকটি ক্যাম্পাসের নিয়ন্ত্রণ নিতে মরিয়া ছাত্র সংগঠন দুটি। প্রকাশ্যে সহাবস্থানের রাজনীতির কথা বলা হলেও বাস্তবে নিয়ন্ত্রণ নিয়ে কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সংগঠন দুটি একে অপরের শত্রু হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। ছাত্রদল ও ছাত্রশিবির এরই মধ্যে সংঘর্ষেও জড়িয়েছে।চট্টগ্রাম নগরীর চকবাজার ‘শিক্ষাকেন্দ্র’ হিসেবে পরিচিত। এ এলাকায় রাস্তার এক পাশে সরকারি চট্টগ্রাম কলেজ, অন্য পাশে হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজ। শুধু এ দুটি কলেজে কমবেশি ৩০ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছেন। এ ছাড়া চকবাজারের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী রয়েছেন লাখের কাছাকাছি। ফলে ছাত্র রাজনীতিতে সব সময় সরগরম এলাকাটি। এর মধ্যে সব ছাত্র সংগঠনের চোখ থাকে চট্টগ্রাম কলেজ ও হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজের দিকে। চকবাজার এলাকায় রয়েছে অনেক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। ফলে এই দুটি কলেজে যে সংগঠনের আধিপত্য থাকে, তারাই এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে চাঁদাবাজি করে।আওয়ামী লীগ আমলে ছাত্রলীগের বিভক্ত দুটি গ্রুপের মধ্যে এ নিয়ে প্রায় সময় সংঘর্ষ লেগেই থাকত। একই কারণে এখন এই দুটি কলেজের নিয়ন্ত্রণ নিতে মরিয়া ছাত্রদল ও ছাত্রশিবির। চট্টগ্রাম কলেজের পাশে প্যারেড ময়দানের গেটে গিয়ে দেখা গেছে, একটি ছোট্ট সাইনবোর্ডে লেখা– ‘এই কলেজে মাদক, ছাত্রলীগ ও ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ।’ কিন্তু বাস্তবে নিষিদ্ধ থাকলেও নানা কৌশলে রাজনীতি চালিয়ে যাচ্ছে এই দুটি সংগঠন। গত ২৬ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম কলেজে ছাত্রশিবির ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা মারামারিতে জড়ান। মূলত আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরপরই কলেজটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় ছাত্রশিবির। ছাত্রদল সেখানে তৎপরতা শুরু করতে চাইলে মুখোমুখি হয়ে পড়েন নেতাকর্মীরা। এক পর্যায়ে তা সংঘাতে রূপ নেয়। এক যুবককে মারধর করে থানায় হস্তান্তর নিয়ে ২১ জুলাই রাতে ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনার জেরে এখনও উত্তেজনা বিরাজ করছে।জানা যায়, চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের নিয়ন্ত্রণ নিয়েও ছাত্রদল ও ছাত্রশিবির মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে। গত ২১ নভেম্বর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট হলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সংঘর্ষে জড়ান ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা। ২০০৯ সাল থেকে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ছাত্রাবাস বন্ধ ছিল। ১৬ বছর পর হলের আসন বরাদ্দের তালিকা প্রকাশ করে পলিটেকনিক কর্তৃপক্ষ। এর পর হলে প্রবেশ নিয়ে দুই সংগঠনের নেতাকর্মীর মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। এভাবে আরও কয়েকটি কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে মুখোমুখি অবস্থানে চলে গেছে সংগঠন দুটি।চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছে ছাত্রশিবির। বিশেষ করে ছাত্রদের ৯টি আবাসিক হলে ইতোমধ্যে কমিটিও গঠন করেছে সংগঠনটি। ছাত্রদলের পাঁচজনের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হলেও নিজেদের মধ্যে অন্তর্কোন্দলের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে আধিপত্য তৈরি করতে সমস্যার মুখে পড়তে হচ্ছে।নগরীর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকেন্দ্রিক ছাত্রদলের তৎপরতা ও ছাত্রশিবিরের সঙ্গে বৈরী সম্পর্কে চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি সাইফুল আলম সমকালকে বলেন, ‘শিবির ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগের সঙ্গে থেকে এতদিন সুবিধা নিয়েছে। এ কারণে এটি এখন গুপ্ত সংগঠন হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে ফ্যাসিস্ট কায়দায় তারা চট্টগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিতে চাচ্ছে। আমরা সহাবস্থানে থেকে রাজনীতি করতে চাই। কিন্তু তাতে তারা বাধা দিচ্ছে। এ কারণে তাদের সঙ্গে আমাদের সমস্যা হচ্ছে। গায়ে পড়ে ঝামেলা তৈরি করলে এবার তাদের ছাড় দেওয়া হবে না।’তবে ছাত্রশিবির চট্টগ্রাম মহানগর উত্তরের সভাপতি তানভীর হোসেন জুয়েল সমকালকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম কলেজ ও হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ছাত্রলীগের মতো ছাত্রদলও চাঁদাবাজি করতে চাচ্ছে। আমরা তাদের এ টার্গেট পূরণ হতে দেব না। ছাত্রশিবির এসব অপকর্মে বাধা হয়ে দাঁড়ানোর কারণে তারা আমাদের নামে কুৎসা রটাচ্ছে। তাতে কাজ কাজ হবে না। ছাত্রশিবির তাদের চেয়ে বেশি সরব ও বেশি কর্মসূচি নিয়ে মাঠে। তাই শিবিরকে গুপ্ত সংগঠন বলে কোনো লাভ হবে না।’

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

চট্টগ্রামে ক্যাম্পাস নিয়ন্ত্রণের চেষ্টায় ছাত্রদল ও শিবির

আপডেট সময় : ১২:২৯:৩১ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৬ জুলাই ২০২৫

বছরখানেক আগেও চট্টগ্রামের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা নিজেদের মধ্যে সংঘাতে জড়াতেন। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর রাতারাতি বদলে যায় হাওয়া। নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ এখন উধাও। এ পরিস্থিতিতে বন্দরনগরীর বিভিন্ন ক্যাম্পাস দখলে নিতে মুখোমুখি ছাত্রদল ও ছাত্রশিবির।চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম কলেজ, হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ, চট্টগ্রাম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিটি কলেজ, কমার্স কলেজ, ইসলামিয়া কলেজসহ আরও কয়েকটি ক্যাম্পাসের নিয়ন্ত্রণ নিতে মরিয়া ছাত্র সংগঠন দুটি। প্রকাশ্যে সহাবস্থানের রাজনীতির কথা বলা হলেও বাস্তবে নিয়ন্ত্রণ নিয়ে কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সংগঠন দুটি একে অপরের শত্রু হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। ছাত্রদল ও ছাত্রশিবির এরই মধ্যে সংঘর্ষেও জড়িয়েছে।চট্টগ্রাম নগরীর চকবাজার ‘শিক্ষাকেন্দ্র’ হিসেবে পরিচিত। এ এলাকায় রাস্তার এক পাশে সরকারি চট্টগ্রাম কলেজ, অন্য পাশে হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজ। শুধু এ দুটি কলেজে কমবেশি ৩০ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছেন। এ ছাড়া চকবাজারের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী রয়েছেন লাখের কাছাকাছি। ফলে ছাত্র রাজনীতিতে সব সময় সরগরম এলাকাটি। এর মধ্যে সব ছাত্র সংগঠনের চোখ থাকে চট্টগ্রাম কলেজ ও হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজের দিকে। চকবাজার এলাকায় রয়েছে অনেক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। ফলে এই দুটি কলেজে যে সংগঠনের আধিপত্য থাকে, তারাই এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে চাঁদাবাজি করে।আওয়ামী লীগ আমলে ছাত্রলীগের বিভক্ত দুটি গ্রুপের মধ্যে এ নিয়ে প্রায় সময় সংঘর্ষ লেগেই থাকত। একই কারণে এখন এই দুটি কলেজের নিয়ন্ত্রণ নিতে মরিয়া ছাত্রদল ও ছাত্রশিবির। চট্টগ্রাম কলেজের পাশে প্যারেড ময়দানের গেটে গিয়ে দেখা গেছে, একটি ছোট্ট সাইনবোর্ডে লেখা– ‘এই কলেজে মাদক, ছাত্রলীগ ও ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ।’ কিন্তু বাস্তবে নিষিদ্ধ থাকলেও নানা কৌশলে রাজনীতি চালিয়ে যাচ্ছে এই দুটি সংগঠন। গত ২৬ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম কলেজে ছাত্রশিবির ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা মারামারিতে জড়ান। মূলত আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরপরই কলেজটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় ছাত্রশিবির। ছাত্রদল সেখানে তৎপরতা শুরু করতে চাইলে মুখোমুখি হয়ে পড়েন নেতাকর্মীরা। এক পর্যায়ে তা সংঘাতে রূপ নেয়। এক যুবককে মারধর করে থানায় হস্তান্তর নিয়ে ২১ জুলাই রাতে ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনার জেরে এখনও উত্তেজনা বিরাজ করছে।জানা যায়, চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের নিয়ন্ত্রণ নিয়েও ছাত্রদল ও ছাত্রশিবির মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে। গত ২১ নভেম্বর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট হলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সংঘর্ষে জড়ান ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা। ২০০৯ সাল থেকে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ছাত্রাবাস বন্ধ ছিল। ১৬ বছর পর হলের আসন বরাদ্দের তালিকা প্রকাশ করে পলিটেকনিক কর্তৃপক্ষ। এর পর হলে প্রবেশ নিয়ে দুই সংগঠনের নেতাকর্মীর মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। এভাবে আরও কয়েকটি কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে মুখোমুখি অবস্থানে চলে গেছে সংগঠন দুটি।চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছে ছাত্রশিবির। বিশেষ করে ছাত্রদের ৯টি আবাসিক হলে ইতোমধ্যে কমিটিও গঠন করেছে সংগঠনটি। ছাত্রদলের পাঁচজনের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হলেও নিজেদের মধ্যে অন্তর্কোন্দলের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে আধিপত্য তৈরি করতে সমস্যার মুখে পড়তে হচ্ছে।নগরীর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকেন্দ্রিক ছাত্রদলের তৎপরতা ও ছাত্রশিবিরের সঙ্গে বৈরী সম্পর্কে চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি সাইফুল আলম সমকালকে বলেন, ‘শিবির ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগের সঙ্গে থেকে এতদিন সুবিধা নিয়েছে। এ কারণে এটি এখন গুপ্ত সংগঠন হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে ফ্যাসিস্ট কায়দায় তারা চট্টগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিতে চাচ্ছে। আমরা সহাবস্থানে থেকে রাজনীতি করতে চাই। কিন্তু তাতে তারা বাধা দিচ্ছে। এ কারণে তাদের সঙ্গে আমাদের সমস্যা হচ্ছে। গায়ে পড়ে ঝামেলা তৈরি করলে এবার তাদের ছাড় দেওয়া হবে না।’তবে ছাত্রশিবির চট্টগ্রাম মহানগর উত্তরের সভাপতি তানভীর হোসেন জুয়েল সমকালকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম কলেজ ও হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ছাত্রলীগের মতো ছাত্রদলও চাঁদাবাজি করতে চাচ্ছে। আমরা তাদের এ টার্গেট পূরণ হতে দেব না। ছাত্রশিবির এসব অপকর্মে বাধা হয়ে দাঁড়ানোর কারণে তারা আমাদের নামে কুৎসা রটাচ্ছে। তাতে কাজ কাজ হবে না। ছাত্রশিবির তাদের চেয়ে বেশি সরব ও বেশি কর্মসূচি নিয়ে মাঠে। তাই শিবিরকে গুপ্ত সংগঠন বলে কোনো লাভ হবে না।’